দেশের বন্দর নগর ,বাণিজ্যিক শহর এবং বলা হয় চট্টগ্রামকে। শুধু ব্যবসা বাণিজ্য নয়, সৌন্দর্যেও চট্টগ্রামের কমতি নেই! পাহাড়, সমুদ্রে এবং উপত্যকায় ঘেরা শহরটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যে প্রাচ্যের রাণী হিসেবে বিখ্যাত। এই জেলার উল্লেখযোগ্য খাবার হল মেজবান ও শুটকি।
নাপিত্তাছড়া ট্রেইলঃ চট্টগ্রামের মিরসরাই-এর নাপিত্তাছড়া ট্রেইল এর কথা সবাই আগেই শুনেছেন। নাপিত্তাছড়া যেতে হলে মিরসরাই এর নদুয়ার বাজার/হাট (নদুইয়ার/নয়দুয়ারীর বাজার/হাট) যেতে হয়। এখানে আসলে ঝরনা আছে তিনটা, এগুলোর নাম হলো কুপিকাটাকুম, মিঠাছড়ি এবং বান্দরকুম বা বান্দরিছড়া। আর ঝরনাগুলোতে যাওয়ার ঝিরিপথটাকে নাপিত্তাছড়া ট্রেইল বলে।
মহামায়া লেকঃ মহামায়া লেক বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম হৃদ যা চট্রগ্রামের মিরসরাই এ অবস্থিত। এর আয়তন প্রায় ১১ বর্গ কিলোমিটার। মিরসরাই উপজেলার ৮ নম্বর দুর্গাপুর ইউনিয়নের ঠাকুরদিঘী বাজার থেকে দুই কিলোমিটার পূর্বে পাহাড়ের পাদদেশে গড়ে তোলা ১১ বর্গ কিলোমিটারের কৃত্রিম লেক নিয়ে গঠিত মহামায়া লেক। আপনি যদি এই যায়গায় না যান তবে মনে করবেন আপনার চট্রগ্রাম সফরটাই বৃথা! মহামায়া লেক একটি প্রাকৃতিক লেক বিশাল এলাকা জুড়ে পাহাড়ি লেকের পানি দিয়ে এই এলাকা গঠিত। এখানে রয়েছে অসাধারণ পাহাড়ি গুহা, রাবার ড্যাম এবং ঝরনা।
খৈয়াছড়া ঝরনাঃ খৈয়াছড়া ঝরনা বাংলাদেশের চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের পাহাড়ে অবস্থিত একটি জলপ্রপাত। মিরসরাই এর এই নয় স্টেপ এর ঝর্না বিস্ময়কর। খৈয়াছড়া – আকার আকৃতি ও গঠনশৈলির দিক দিয়ে এটা নিঃসন্দেহে এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ঝরনাগুলোর একটি। এর মোট ৯ টি মুল ধাপ এবং অনেকগুলো বিচ্ছিন্ন ধাপ প্রমান করে যে এমন ঝরনা দেশে এখনো দেখা যায়নি।
বাওয়াছড়া লেকঃ বাওয়াছড়া লেকটি মিরসরাই-এর ওয়াহেদপুর গ্রামের বারমাসি ছড়ার মুখে অবস্থিত বলে লেকটির নামকরণ করা হয়েছে বাওয়াছড়া লেক। মিরসরাই উপজেলার ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের ছোটকমলদহ বাজারের দক্ষিণ পাশে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দেড় কিলোমিটার পূর্বে লেকের অবস্থান। এর মধ্যে সামান্য পথ ছাড়া বাকি পথ গাড়িতে যাওয়া যায়। টলটলে শান্ত পানির চুপচাপ বয়ে চলার ধরণই বলে দেবে এর উৎস অবশ্যই বিশাল কিছু থেকে। শেষ বিকেলের সূর্যের আলো যখন লেকে পড়ে তখন দূর থেকে মনে হয় পুরো প্রকল্পটি যে একটি পর্যটন কেন্দ্র।
সোনাইছড়ি ট্রেইলঃ চট্টগ্রাম জেলার মীরসরাই পাহাড় রেঞ্জ এর হাদি ফকিরহাট বাজার এলাকায় অবস্থিত সোনাইছড়ি ট্রেইল। এই ট্রেইল বারৈয়াঢালা অভয়ারণ্যের আওতাভুক্ত। বৈচিত্র্যময় এই ট্রেইল পুরোমাত্রায় বুনো এবং পাথুরে! বর্ষায় এর দূর্গমতা বেড়ে যায় অনেক বেশি। তিন্দুর মত বড় বড় পাথর, বাদুজ্জাকুমের ভয়াবহতা টেনে নিয়ে যায় অ্যাডভেঞ্চার প্রেমীদের।বৃষ্টি বা বর্ষায় বেশ পিচ্ছিল হয়ে যায় পাথরের বড় বড় বোল্ডারগুলো। খাড়া পাহাড়, পিচ্ছিল ঝিরি পথ, বাদুড় ভর্তি বাদুইজ্জাখুম এবং ট্রেইলের শেষ মাথায় সোনাইছড়ি ঝর্না পাবেন এই ট্রেইলে।
ঝরঝরি ট্রেইলঃ সীতাকুণ্ড, মীরসরাই এর জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র বলতে চন্দ্রনাথ পাহাড়, খৈয়াছড়া ঝরনা, নাপিত্তাছড়া ট্রেইল, কমলদহ ঝরনা প্রভৃতি। এগুলোর বাহিরেও আরো বেশ কিছু ঝরনা, ট্রেইল রয়েছে যা খুব একটা পরিচিতি পায় নি। তেমনি একটা ট্রেইল হলো ঝরঝরি ট্রেইল।
ছাগলকান্দা ঝরনাঃ ছাগলকান্দা ঝরনার ট্রেইল মোটামুটি অপরিচিত একটা ট্রেইল। অসাধারন এই ট্রেইলে বড় কমলদহ ঝর্ণা আছে। বড় দারোগার হাট থেকে মহা সড়ক ধরে উত্তর দিকে (ঢাকার দিকে) আসলে প্রথমে একটি ইট খোলা পরবে। ইট খোলা পার হয়ে হাতের ডানের প্রথম মাটির রাস্তা ধরে যেতে হবে । রাস্তা ধরে কিছু দূর গিয়ে ঝিরিতে নেমে ঝিরি ধরে ২০ মিনিটের মত গেলে ঝিরি মুখে পড়বে কমলদহ ঝরনা। মূলত এটি একটি ক্যাসকেড। ছাগলকান্দা ঝরনা আরেক নাম কমলক ঝরনা।
গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকতঃ গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলায় অবস্থিত। সীতাকুণ্ড বাজার থেকে গুলিয়াখালি সি বীচের দূরত্ব মাত্র ৫ কিলোমিটার। অনিন্দ্য সুন্দর এই সৈকতকে সাজাতে প্রকৃতি কোনো কার্পন্য করেনি। একদিকে দিগন্তজোড়া সাগর জলরাশি আর অন্যদিকে কেওড়া বন এই সাগর সৈকতকে করেছে অনন্য। কেওড়া বনের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া খালের চারিদিকে কেওড়া গাছের শ্বাসমূল লক্ষ করা যায়, এই বন সমুদ্রের অনেকটা ভেতর পর্যন্ত চলে গেছে। এখানে পাওয়া যাবে সোয়াম্প ফরেস্ট ও ম্যানগ্রোভ বনের মত পরিবেশ। গুলিয়াখালি সৈকতকে ভিন্নতা দিয়েছে সবুজ গালিচার বিস্তৃত ঘাস। সাগরের পাশে সবুজ ঘাসের উন্মুক্ত প্রান্তর নিশ্চিতভাবেই আপনার চোখ জুড়াবে।
কুমারীকুন্ডঃ পৌরাণিক এক অঞ্চল সীতাকুন্ড। পাহাড়ের এদিকে সেদিক শত শত ছড়া। একেকটা ছড়ায় একেক বিস্ময় লুকিয়ে রাখা। তেমনি এক ছড়ায় খুঁজে পাওয়া গেলো রহস্যময় এক প্রাচীন মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ, কুমারীকুন্ড। সম্ভবত প্রাচীন হিন্দুরা হট স্প্রিং বা উষ্ণ প্রস্রবণকে পবিত্র ভাবতেন। সীতাকুন্ডের প্রসিদ্ধ লবণাক্ষকুন্ড ও অগ্নিকুন্ড মূলত বুদবুদ করে বেরোনো গ্যাসে জালানো অগ্নিকুন্ডকে উপজীব্য করেই পীঠস্থান নামে গড়ে উঠেছে। হয়তো এটিও ছিলো সেরকমই কোনো এক মন্দির। যুগের ব্যবধানে ও মূল তীর্থ অঞ্চল থেকে অন্তত ১০ কিলোমিটার দূরত্বজনিত দূর্গমতার কারণে মানুষ যার কথা হয়তো বিষ্মিত হয়েছে। চিপা ঝিরির ঝোপঝাড়ের ডালপালা ভেঙ্গে অনেকদূর যাবার পর হঠাৎ মাটি চাপা পড়া পুরোনো দিনের ইটের কাঠামো।
চন্দ্রনাথ পাহাড়ঃ সীতাকুণ্ড বাজার থেকে ৪কি.মি. পূর্বে চন্দ্রনাথ পাহাড় অবস্থিত। আপনি পায়ে হেঁটে অথবা রিক্সায় চড়ে চন্দ্রনাথ পাহাড়ে যেতে পারেন। কিন্তু পায়ে হেঁটে ভ্রমণের মজাই আলাদা, কারণ চন্দ্রনাথ পাহাড় শ্রেণীভূক্ত ছোট পাহাড় গুলো ব্যাসকুণ্ড থেকে শুরু হয়েছে। চন্দ্রনাথ পাহাড়ে যাবার পথে হিন্দুদের কিছু ধর্মীয় স্থাপনাও আপনার চোখে পড়বে। এখানে কিছু নৃতাত্বিক জনগোষ্ঠীর মানুষও বসবাস করে, যারা ত্রিপুরা নামে পরিচিত এবং এখানে তাদের কিছু গ্রামও আছে।
বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকতঃ এই সমুদ্র সৈকতের মুল আকর্ষণ হল, প্রায় আধা কিলোমিটারের বেশি আপনি সমুদ্রের ভেতর হেঁটে যেতে পারবেন। এখানে এসে নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়ানো যাবে, আহরণ করা যাবে প্রকৃতির শোভা। ঝাউ বাগানের সারি সারি ঝাউ গাছ ও নতুন জেগে উঠা বিশাল বালির মাঠ, সব মিলিয়ে এ এক অপূর্ব সৌন্দর্য অপেক্ষা করছে দর্শনার্থীদের জন্য।
হাজারিখিলঃ চট্টগ্রাম শহর থেকে ৪৫ কিলোমিটার উত্তরে রামগড়-সীতাকুণ্ড বনাঞ্চল। এ বনাঞ্চলের মধ্যেই রয়েছে বিচিত্র সব বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য হাজারিখিল, যেখানে আছে ১২৩ প্রজাতির পাখি। রঙ-বেরঙের এসব পাখির মধ্যে রয়েছে বিপন্ন প্রায় কাঠময়ূর ও মথুরা। আছে কাউ ধনেশ ও হুতুম পেঁচাও। বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদের সমারোহ থাকার কারণে চিরসবুজ এই বনে এমন কিছু প্রজাতির পাখি পাওয়া গেছে, যা অন্য কোনো বনে সচরাচর দেখা যায় না। এরমধ্যে রয়েছে হুদহুদ, চোখ গেল, নীলকান্ত, বেঘবৌ, আবাবিল। এসব পাখির আকার-আকৃতি, বর্ণ ও স্বভাবে বৈচিত্র্যময়।
সীতাকুণ্ড ইকো পার্কঃ চট্রগ্রাম শহর থেকে ৪০ মিনিটের পথ সীতাকুণ্ড, সেখানেই রয়েছে অসাধারণ এক পর্যটন স্পট। আপনি চাইলে ঘুরে আসতে পারেন এখান থেকে। সীতাকুণ্ডে আপনি দেখতে পাবেন দুইটি ঝরনা, এদের একটির নাম সহস্রধারা এবং অন্যটি সুপ্তধারা। যদিও ঝরনার ধারে যেতে হলে আপনাকে পাহাড়ি রাস্তা বেয়ে উপরে এবং নিচে নেমে যেতে হবে পাড়ি দিতে হবে দুর্গম পথ। আপনি যদি অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় হন তবে অবশ্যই এই সুযোগ লুফে নিতে পারেন। এছাড়াও সীতাকুণ্ড ইকো পার্কে রয়েছে অসংখ্য দুর্লভ গাছের সমষ্টি যা আপনার বৃক্ষ বিষয়ে ধারণাকে শাণিত করবে, একই সাথে এখানকার উঁচু উঁচু পাহাড় আপনাকে প্রাকৃতিক অনন্য অনুভূতি দিবে।
সহস্রধারা ঝর্ণাঃ চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলার ঐতিহ্যবাহী চন্দ্রনাথ রির্জাভ ফরেস্ট ব্লকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সুশোভিত চিরসবুজ বনাঞ্চলের সীতাকুণ্ড ইকোপার্কে সহস্রধারা ঝরনাটি অবস্থিত। ইকোপার্কটি চট্টগ্রাম শহর থেকে ৩৫ কি.মি. উত্তরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক এবং রেলপথের পূর্ব পাশে অবস্থিত। বর্ষাকাল ছাড়া বছরের বাকি সময় এই ঝরনায় পানি অনেক কম থাকে। যদি বর্ষাকালে যাওয়া যায় তাহলে ঝরনাটিকে পানিতে পরিপূর্ণ অবস্থায় দেখতে পাবেন এবং সৌন্দর্য পুরোপুরি উপভোগ করতে পারবেন।
সুপ্তধারা ঝর্ণাঃ চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলার ঐতিহ্যবাহী চন্দ্রনাথ রির্জাভ ফরেস্ট ব্লকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সুশোভিত চিরসবুজ বনাঞ্চলের সীতাকুণ্ড ইকোপার্কে সুপ্তধারা নামের এই ঝরনাটি অবস্থিত। ইকোপার্কটি চট্টগ্রাম শহর থেকে ৩৫ কি.মি. উত্তরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক এবং রেলপথের পূর্ব পাশে অবস্থিত। বর্ষাকাল ছাড়া বছরের বাকি সময় এই ঝর্ণায় পানি থাকে না। তাই শুস্ক মৌসুমে দূর থেকে দেখলে মনে হবে ঝরনায় কোনো পানি নেই। তবে, ঝরনার কাছে গেলে সামান্য কিছু পানি পরতে দেখবেন। যদি বর্ষাকালে এখানে আসেন তবে ঝরনাটিকে পানিতে পরিপূর্ণ অবস্থায় দেখতে পাবেন এবং সৌন্দর্য পুরোপুরি উপভোগ করতে পারবেন।
ভাটিয়ারী লেকঃ চট্রগ্রাম শহর সিটি গেইট থেকে মাত্র ২০ মিনিটের দূরত্বে ভাটিয়ারীতে রয়েছে অসাধারণ প্রাকৃতিক রূপে বৈচিত্র্য। এখানে আপনি সব কিছুই পাবেন, পাহাড়, কাক চক্ষুর মত স্বচ্ছ লেকের পানি, সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত গলফ কোর্স। সম্পূর্ণ অঞ্চলটি সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত এবং একই যায়গায় চট্রগ্রাম সেনানিবাস অবস্থিত বলে এখানে নিরাপত্তা নিয়ে আপনাকে চিন্তিত হতে হবে হবেনা। বর্ষাকালে ভাটিয়ারী লেকের উপচে পড়া পানি আপনাকে শিহরিত করবে একই সাথে পাহাড় এবং পাহাড়ের গায়ে সূর্যাস্ত আপনার মনকে ভরিয়ে দিতে যথেষ্ট।
নন্দীরহাট জমিদার বাড়িঃ জমিদার লক্ষীচরণ সাহার এই বাড়িটি নির্মাণ হয় ১৮৯০ সালে। ১৯৭৫ সালের মাঝমাঝিতে সত্য সাহা উনার প্রযোজনায় বাংলা ছবি ‘অশিক্ষিত’ নির্মাণ করেন – যার শুটিং হয় এই জমিদারবাড়িতে। জানা যায়, টানা ১৮ দিন শুটিং চলে এখানে। চট্টগ্রামের অক্সিজেন হতে লোকাল সিএনজি ও লোকাল বাসে করে যাবেন নন্দীরহাট বাজার। বাজারে নেমে বামদিক/পশ্চিমে একটি রাস্তা দেখতে পাবেন যেটি ধরে ১০ মিনিট হাঁটলেই রাস্তার ডানপাশে এই জমিদারবাড়িটি চোখে পড়বে।
চালন্দা গিরিপথঃ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ন চালন্দা গিরিপথ। গিরিপথটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭’শ ৫৩ একর আয়তনের মধ্যেই অবস্থিত। অ্যাডভেঞ্চার আর ভ্রমণ প্রিয় মানুষদের ভ্রমণভাণ্ডারে এখন নতুন নাম চালন্দা গিরিপথ। তাইতো প্রতিদিনই দলবদ্ধ হয়ে নানান দল পাড়ি জমাচ্ছে এই নৈসর্গিক গিরিপথের দিকে।
বায়েজিদ বোস্তামীর মাজারঃ এটি চট্টগ্রাম এর নাসিরাবাদের একটি পাহাড়ের উপরে অবস্থিত। ইরানের বিখ্যাত পার্সিয়ান সুফি বায়েজিদ বোস্তামীর নামে গড়ে উঠা এই মাজার চট্টগ্রামের ধর্মপ্রাণ মানুষের পাশাপাশি চট্টগ্রামে আসা দেশি-বিদেশী পর্যটকদের জন্যও একটি অত্যন্ত আকর্ষনীয় স্থান। এই সমাধির অবয়ব সর্বপ্রথম ১৮৩১ সালে পাহাড়ের উপরিভাগে একটি দেয়ালঘেরা আঙ্গিনার মাঝে আবিস্কার করা হয়।
লেক ভিউ আইল্যান্ডঃ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে কাপ্তাই লেকের পাড়ের ছোট ছোট টিলা ঘেরা একটি পরিত্যক্ত ক্যাম্পেই গড়ে তোলা হয়েছে লেক ভিউ আইল্যান্ড। পাশাপাশি দুটি টিলার চার একরের অধিক এলাকা নিয়ে তৈরি করা হয়েছে পর্যটন এলাকাটি। এখানে তৈরি করা হয়ছে দৃষ্টিনন্দন কটেজ। নৌকা নিয়ে হ্রদের পানিতে ঘুরতে বের হলে চোখে পড়বে পাহাড়ি টিলার গায়ে বড় আকারের ইংরেজি অক্ষরে লেখা ‘লেক ভিউ আইল্যান্ড’। পানি থেকে টিলার উপরে যাওয়া ইট কংক্রিটের তৈরি সিঁড়ি বেয়ে উঠতেই দেখা মিলবে চারপাশে সবুজ গাছে ঘেরা কটেজ।
ফয়েজ লেকঃ ফয়েজ লেক চট্টগ্রামের পাহাড়তলী রেলস্টেশন এর অদূরে খুলশি এলাকায় অবস্থিত একটি কৃত্রিম হ্রদ। চট্টগ্রামের জিরো পয়েন্ট থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এটি ১৯২৪ সালে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে কতৃপক্ষ এর তত্ত্বাবধানে খনন করা হয় এবং সে সময় পাহারতলী লেক হিসেবে পরিচিত ছিল। পরবর্তীতে লেকটি ব্রিটিশ প্রকৌশলীর নামে নামকরণ করা হয় যিনি এটির নকশা তৈরিতে সহায়ক ছিলেন। বেশ বড় মাপের (৩৩৬ একর জমি) এই লেকটি পাহাড়ের এক শীর্ষ থেকে আরেক শীর্ষের মধ্যবর্তী একটি সংকীর্ণ উপত্যকায় আড়াআড়ি ভাবে বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে সৃষ্ট। আড়াআড়ি ভাবে নির্মিত বাঁধটি চট্টগ্রাম শহরের উত্তর দিকের পাহাড় শ্রেণীর থেকে নেমে আসা পানির প্রবাহের দিক পরিবর্তনের মাধ্যমে এই লেকটিকে সৃষ্টি করেছে। ফয়েজ লেকের পাশেই আছে চট্টগ্রাম শহরের সবচেয়ে উঁচু পাহাড় বাটালি হিল। লেকের আশেপাশের মনোরম পরিবেশ এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আকর্ষণে প্রতি বছর বহু পর্যটক ছুটে আসেন।
পারকি সমুদ্র সৈকতঃ পারকি সমুদ্র সৈকত চট্টগ্রাম শহর থেকে মাত্র এক থেকে দেড় ঘণ্টার পথ দূরত্বে অবস্থিত। একটা সময় সমুদ্র সৈকত বলতে শুধু কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত বোঝানো হলেও ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হচ্ছে এই পারকি সমুদ্র সৈকতও। একদিকে ঝাউবনের সবুজের সমারোহ, আরেকদিকে নীলাভ সমুদ্রের বিস্তৃত জলরাশি আপনাকে স্বাগত জানাবে। আর সমুদ্র তীরের মৃদুমন্দ বাতাস আপনার মনকে আনন্দে পরিপূর্ণ করে দেবে নিমেষেই।
পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতঃ পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত বন্দরনগরী চট্টগ্রামের একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র, যা কর্ণফুলী নদীর মোহনায় অবস্থিত। চট্টগ্রাম শহরের জিরো পয়েন্ট থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত পতেঙ্গা। পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের প্রস্থ খুব বেশি নয় এবং এখানে সমুদ্রে সাঁতার কাটা ঝুঁকিপূর্ণ। পাবেন ২০ টাকায় ঘোড়ার পিঠে চড়ার সুযোগ। সেই সঙ্গে আছে স্পিডবোড কিংবা কাঠের তৈরি নৌকায় ওঠার সুযোগও। সাধারণত বিকেল গড়াতে থাকলে জোয়ার আসতে শুরু করে। জোয়ার শুরুর আগে বাঁধ অনেকটা তলিয়ে যাবে। তীরে এসে পড়বে ঢেউ।
মিনি বাংলাদেশঃ আপনি যদি বাংলাদেশের সকল স্থাপনা এক সাথে এক জাগয়ায় দেখতে চান তবে অবশ্যই চলে যেতে হবে চট্টগ্রামের কালুর ঘাটে অবস্থিত মিনি বাংলাদেশ-এ। কী নেই এখানে? সংসদ ভবন থেকে শুরু করে কান্তজির মন্দির, আহসান মঞ্জিল, সুপ্রিমকোর্ট, ষাট গুম্বজ মসজিদ ইত্যাদি। মিনি বাংলাদেশে বিভিন্ন স্থাপনার পাশাপাশি রয়েছে চট্রগ্রামের সংস্কৃতির নান্দনিক উপস্থাপনা।
ওয়ার সিনেমট্রিঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহতদের সমাধিস্থল ওয়ার সিমেট্রি এখন চট্টগ্রামের অন্যতম পর্যটন স্পট। এটি চট্রগ্রামের মেহদীবাগ গোল পাহাড় এলাকায় অবস্থিত। বিশ্বযুদ্ধে ইন্দো-বার্মা রণাঙ্গনে আজাদ হিন্দ ফৌজের আক্রমণে মিত্রবাহিনীর যেসব সৈনিক প্রাণ হারান তাদের সমাহিত করা হয় চট্টগ্রামের বাদশা মিয়া রোডের প্রাকৃতিক এ পরিবেশে। ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নেওয়া এই ওয়ার সিমেট্রিকে দেওয়া হয়েছে নান্দনিক রূপ। অসাধারণ সাজানো গোছানো পরিবেশ আপনার মন ভোরিয়ে দিবে। পাহাড়ের ভাঁজে অপরূপ সাজে দাঁড়িয়ে থাকা এ সমাধিস্থল দেখতে ভিড় করেন অনেক ভ্রমণপিপাসু।
বাটালি হিলঃ চট্টগ্রাম শহরের জিরো পয়েন্ট থেকে মাত্র ১ কিলোমিটার দূরে চট্টগ্রামের মূল কেন্দ্র টাইগারপাস এলাকায় বাটালি হিল অবস্থিত। এটি চট্টগ্রাম শহরের সবচেয়ে উঁচু পাহাড়। উচ্চতা প্রায় ২৮০ ফুট। চট্টগ্রাম শহরের প্রাণ কেন্দ্রের লালখান বাজার এলাকার ইস্পাহানী মোড়ের উত্তরে ফাহিম মিউজিকের পাশ ঘেষে এবং ম্যাজিস্ট্রেট কলোনীর পিছন দিয়ে পিচঢালা পথ বেয়ে উপরে দিকে উঠে গেছে বাটালি হিলের রাস্তা। এই বাটালি হিল আবার ‘জিলাপি পাহাড়’ নামেও পরিচিত।
সন্দ্বীপঃ সন্দ্বীপ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্গত একটি দ্বীপ। এটি মেঘনা নদীর মোহনায় অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের অত্যন্ত প্রাচীন একটি দ্বীপ। এখানে প্রায় চার লক্ষ জনসংখ্যা রয়েছে। সমগ্র দ্বীপ ৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ৫-১৫ কিলোমিটার প্রশস্ত।
চট্টগ্রামে এছাড়া ও আরো অনেক দর্শণীয় স্থান রয়েছে সেগুলো পরবর্তীতে তুলে ধরা হবে । তাই আমাদের সাথেই থাকুন । ধন্যবাদ..............!
0 Comments
Thank You